আসসালামু আলাইকুম । নতুন ব্লগে আপনাকে স্বাগতম । আজকের এই ব্লগে আমরা কথা বলব কোরবানির গোশত কিভাবে বিতরণ করতে হবে অথবা কোরবানির মাংস ভাগ বন্টন করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব । কোরবানির ঈদ এটি মুসলমানদের জন্য অনেক বড় একটি উৎসব । কোরবানির ঈদকে ঈদুল আযহা ও বলা হয় ।তাহলে চলুন কোরবানির ঈদ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত এবং কোরবানির গোশত ভাগ বন্টন করার সঠিক নিয়ম জেনে নেই ।
সারা বিশ্বের মুসলমানরা এই ঈদ পালন করে থাকে । এটি সাধারণত সৃষ্টিকর্তার আনুগত্যের জন্য ছাগল, গরু ,
ভেড়া , উট , দুম্বা ইত্যাদি কোরবানি করে এই ঈদ পালন করা হয় । হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর পুত্রকে বলিদানের ঘটনা থেকেই মুসলমানদের মাঝে কোরবানির প্রথা প্রচলিত হয় ।
কোরবানিঃ
মুসলমান জাতির জন্য সব থেকে বড় দুটি উৎসব হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা । ঈদুল আযহা কে আমরা কোরবানির ঈদ নামেও চিনি ।
এই ঈদে মুসলমানরা তাদের নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করে থাকেন । কোরবানির গোস্ত শুধু নিজে একা গ্রহণ করা যাবে না ।
পরিবার প্রিয়জন এবং পাড়া-প্রতিবেশী ছাড়াও আত্মীয় স্বজনদের মাঝে ঠিকভাবে ভাগাভাগি করে দিতে হবে ।
কুরবানী করার নিয়মঃ
আপনারা যারা কোরবানি করবেন তারা কুরবানী করার জন্য এটি নির্ভরযোগ্য এবং স্বনামধন্য কসাই বেছে নিন যে সঠিক নিয়মে
কোরবানির পশু কোরবানি করতে পারবে । এবং যে প্রশ্নটি আপনি ক্রয় করবেন ওই কৌশল টাকা আপনার হালাল হতে হবে ।
আপনার ক্রয় কৃত টাকা হালাল না হলে কোরবানি হবে না ।
ইসলামিক ভাবে কোরবানি করার একটি নিয়ম আছে নির্দিষ্ট দিনে কোরবানি করতে হবে।
ইসলামিক মাসের ১০ -১১ এবং ১২ তম দিনে কোরবানি করা যাবে ।
কোরবানির আগে অবশ্যই কোরবানির যথাযথ নিয়ত করতে হবে । মনে রাখতে হবে কোরবানির উদ্দেশ্য মাংস খাওয়া নয় ।
কোরবানির আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করা । আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টির জন্যই কোরবানি করতে হবে ।
কোরবানি সবার উপর ফরজ না যাদের সামর্থ্য আছে তারাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করবে ।
আপনি যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে আপনি নিজে একাই কোরবানি করুন অথবা আপনার সামর্থ্য না থাকলে আপনি ভাগে কোরবানি করেন ।
কিন্তু মনে রাখতে হবে যাদের সাথে ভাগে কোরবানি করবেন সবাই একই পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে ।
এবং সবার নিয়ত সঠিক থাকতে হবে । এছাড়াও যাদের সাথে ভাগে কোরবানি করবেন সকলে টাকা যেন হালাল হয় ।
কোরবানির জন্য যে পশুটি ক্রয় করা হবে সেই পশুর সকলের মত অনুযায়ী ক্রয় করতে হবে ।
কোরবানি করার জন্য যে প্রশ্নটি নির্বাচন করা হবে সেই পশুটি যেন নিখুঁত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
পশুর সম্পূর্ণ অংশ ভালোভাবে খেয়াল করে দেখতে হবে পশুর গায়ে কোন ধরনের খুঁত আছে কিনা ।
Read More :বাংলাদেশের সেরা ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়
গোস্ত বাছাই করা এবং প্রস্তুত করাঃ
কোরবানির পশু কোরবানি করা শেষ হলে কোরবানির মাংস তিনটি সমান ভাগে ভাগ করতে হবে ।
একটি হচ্ছে ব্যক্তিগত গ্রহণ করবেন অথবা যদি ভাগে কুরবানী করেন তাহলে ভাগীরা সঠিকভাবে সেই গোস্ত ভাগাভাগি করে নিবেন ।
এবং আরেকটি অংশ বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ভাগ করতে হবে ।
এবং আরেকটি বাকি অংশ গরিব-দুঃখীদের জন্য আলাদা করে রাখতে হবে ।
কোরবানির গোশত সঠিকভাবে পরিষ্কার করতে হবে । এবং পরিষ্কার জায়গায় মাংস ভাগাভাগি করতে হবে ।
কোন ভাগে মাংস জনকল না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
কোরবানির মাংস যতগুলা ভাগ হবে সব ভাগই যেন সঠিক পরিমাণ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
সঠিক পরিমাপ যন্ত্র ব্যবহার করে আমাদের কোরবানির মাংস ভাগ করতে হবে ।
মাংস ভাগাভাগির পর সংরক্ষণ করার সময় অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত ।
তবে খেয়াল রাখতে হবে কোরবানির গোশত বেশি দিন সংরক্ষণ করে রাখা যাবে না ।
আমরা অনেক সময় রেফ্রিজারেশন সুবিধার মাধ্যমে কোরবানির গোশত সংরক্ষণ করে থাকি ।
কোরবানির গোশত ফ্রিজে বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যাবে না ।
এতে গোস্তর গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায় । সংরক্ষণ করলেও পরিষ্কার পাত্র এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে ।
পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিতরণঃ
কোরবানি করার পর কোরবানির মাংস কি তিনটি ভাগে ভাগ করার পর একটি ভাগ পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনদের জন্য রাখতে হবে ।
আপনার পরিবারে যারা কোরবানি করতে পারেনি তাদেরকে গোস্ত দিতে হবে ।
এবং আপনার আত্মীয় স্বজনদের মাঝে মাংস পৌছিয়ে দিতে হবে ।
প্রতিটি ভাগে নির্দিষ্ট পরিমাণ মাংস দিতে হবে । কাউকে কম কাউকে বেশি দেওয়া যাবে না ।
আপনার কোরবানির গোশতের ওপর আপনার পরিবারের বাকি মানুষ এবং আপনার
পাড়া-প্রতিবেশী সহ আপনার আত্মীয়-স্বজনদের হক রয়েছে । তাই সবার মাঝে মানুষের সমান ভাগে ভাগাভাগি করে দিতে হবে ।
কোরবানির মাংস ভাগাভাগি করার মাঝেই যেন কোরবানি ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি হয়ে যায় ।
এবং পরিবারের সকলে মিলে কোরবানির গোশত ভাগাভাগি করে খাওয়ার মজাটাই যেন আলাদা ।
আমাদের যাদের সামর্থ্য আছে আমরা অবশ্যই কোরবানি করব এবং সকলের মাঝে মাংস ভাগাভাগি করে দিব ।
প্রিয়জনদের মাঝে অবশ্যই সঠিক নিয়মে এবং সঠিক পরিমাণে মাংস বিতরণ করতে হবে ।
আপনার কোরবানির গোশত এর পরিমাণ অনুযায়ী আপনি কয়েকটি ভাগে ভাগ করুন এবং আত্মীয়-স্বজন দের মাঝে বিলিয়ে দিন ।
গরিব দুঃখী দের মাঝে বিতরণ করাঃ
কোরবানির গোশত একটি বিশেষ অংশ গরিব দুঃখীদের জন্য আলাদা করতে হবে ।
এবং গরীব দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করে দিতে হবে ।
আপনার কোরবানির গোশত আর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ গোশত গরিবদের জন্য আলাদা করতে হবে
এবং সেই মাংস নির্দিষ্ট একটি পরিমাণে অনেকগুলো ভাগ করতে হবে ।
এবং সেই মাংসগুলোকে গরিবদের মাঝে সমান ভাগে বিতরণ করতে হবে ।
আপনার কোরবানির গোশত বিতরণ করার জন্য যোগ্য প্রাপকদের নির্বাচন করতে হবে এবং যাদের কোরবানির
গোশত বেশি প্রয়োজন তাদের মাঝেই কোরবানির পৌঁছে দিতে হবে ।
কোরবানির মাংস ভাগাভাগি করার সময় ন্যায্যতা এবং ন্যায়পরায়না থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে ।
কোন ধরনের পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না । একান্তই যাদের কোরবানির গোশত প্রয়োজন
এবং আপনার দেখা মতে সমাজের সকল গরিবদের মাঝে গোশত ভাগাভাগি করে দিতে হবে ।
মনে রাখতে হবে নিজের কাছের লোক বা বন্ধুদের কখনো আপনার কোরবানির গোশত থেকে বঞ্চিত করা যাবে না ।
উপসংহারঃ
কোরবানি করার পর কোরবানির গোস্ত বিতরণ ঈদুল আযহা উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।
সঠিক নিয়ম এবং সঠিক নির্দেশনা মেনে কুরবানীর গোশত ভাগাভাগি করতে হবে । কোরবানির গোশত ন্যায্যতা এবং পরিমাণের উপর নির্ভর করে ভাগ করতে হবে ।
কোরবানির গোস্ত সঠিকভাবে ভাগাভাগি করার জন্য সকলে মিলে একত্রিত হলে এদের সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে ঐক্য এবং উদারতা বোধ বৃদ্ধি পায় ।
আমরা সকলের সম্মিলিতভাবে কোরবানির গোশত সঠিক পরিমাণে যারা কোরবানি করেছেন তাদের মাঝে
এবং যারা কোরবানি করে নাই সমাজের বাকি মানুষদের মাঝে এবং আরেকটি অংশ পরিবার প্রিয়জন আত্মীয়-স্বজন
এবং গরীব দুঃখীদের মাঝে কোরবানির গোসত বিতরণ করতে হবে ।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১। আপনি কি অন্য কারো পক্ষ থেকে কুরবানী করতে পারবেন ?
জ্বি , আপনি অন্য কারো পক্ষ থেকে কুরবানী করতে পারবেন ।
যেমন পরিবারের মৃত ব্যক্তি অথবা যে ব্যক্তি কোরবানি করতে অক্ষম ।
এবং আপনি যার পক্ষ থেকে কোরবানি করবেন সে জীবিত থাকলে তার সম্মতি নিতে হবে
এবং তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে ।
২।কুরবানীর গোশত কিভাবে সংরক্ষণ করতে হবে ?
কোরবানির গোশত সংরক্ষণ করার বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে । যদি এ রেফ্রিজারেশন সুবিধা পাওয়া যায়
তাহলে কোরবানির মাংস পরিষ্কার করে সঠিক পাত্র নির্বাচন করে সংরক্ষণ করতে হবে যাতে মাংস এর সহযোগিতা বজায় থাকে ।
রেফ্রিজারেশন ছাড়াও কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করা যায় এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংরক্ষণ করতে হবে ।
৩। কুরবানীর পরিবর্তে টাকা দান করা যাবে কিনা ?
হ্যাঁ , আপনি দান করতে পারবেন যে সংগঠনগুলো ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে কুরবানী পালন করে ।
যদি আপনি ব্যক্তিগতভাবে কোরবানি করতে অক্ষম হন তাহলে আপনি এই বিকল্প কাজটি করতে পারবেন ।
৫। কোরবানির গোস্ত বিতরণের ক্ষেত্রে আপনি কিভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া যাবে ?
কোরবানির মাংস প্রথমে আপনার পরিবারের বাকি সদস্যদের মাঝে বিতরণ করতে হবে । এবং আত্মীয়-স্বজন সহ ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মাঝে বিতরণ করতে হবে । এরপরে ন্যায্যতা অনুযায়ী যাদের প্রয়োজন অর্থাৎ গরিবদের মাঝে কোরবানির গোস্ত বিতরণ করতে হবে । আপনার কোরবানির গোশত পাওয়ার যোগ্য এমন মানুষদের সনাক্ত করে তাদেরকে কোরবানীর গোশত পৌঁছে দিতে হবে ।