আসসালামু আলাইকুম । নতুন এ ব্লগে আপনাকে স্বাগতম । মুসলমানদের সবথেকে বড় দুইটি উৎসব হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা ।ঈদুল আযহা কে আমরা কোরবানি ঈদ নামেও চিনি । কোরবানির করার সময় অবশ্যই সঠিক নিয়ত থাকতে হবে এবং দোয়া পড়ে কোরবানি করতে হবে । আমরা অনেকেই কোরবানি করার জন্য নির্দিষ্ট দোয়া এবং নিয়ত খুঁজে থাকি । আপনি যদি কোরবানির দোয়া এবং নিয়ত খুঁজে থাকেন তাহলে আজকের এই পোস্ট আপনার জন্যই । তাহলে চলুন কোরবানী সম্পর্কে দোয়া এবং নিয়ত জেনে নেই ।
কোরবানির ফজিলতঃ
এটি মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব হলেও এটি অনেক আনন্দের ।
কোরবানি ঈদ যেমনটা আনন্দের ঠিক তেমনি মুসলমানদের ত্যাগের একটি পরীক্ষা ।
আল্লাহ তায়ালার জন্য যে পশুগুলো কোরবানি জায়েজ তার মধ্যে কোন একটি পশু আল্লাহর
জন্য উৎসর্গ করা হচ্ছে কোরবানি ।কোরবানি মুসলমানদের জন্য একটি প্রধান ইবাদত ।
যাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে তাদের উপর আল্লাহ তায়ালা কোরবানি কে ওয়াজিব করেছেন ।
কোরবানি করার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে অশেষ সয়াব দেন । কুরবানী করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহতালার নৈকট্য অর্জন করতে পারি ।
এবং কুরবানী করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্ট অর্জন করতে পারি ।

কোরবানি করার মাধ্যমে আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারি ।
কোরবানি করলে আমাদের ধন সম্পদের পরিমাণ কমে যায় না
এর ফলে আল্লাহ তাআলা আমাদের ধন সম্পদের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করে দেন ।
কোরবানি করার ফলে আমাদের আরো সংসারিক উন্নতি হয় ।
কোরবানির মাংস শুধু নিজেরা নয় এটি সমাজের সকল হতদরিদ্র মানুষ
এবং যারা কোরবানি করতে পারে নাই তাদের মাঝে বিতরণ করতে হবে ।
এছাড়াও আপনার কোরবানির গোস্তের ওপর আপনার আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীর হক রয়েছে । অবশ্যই তাদের পূরণ করতে হবে ।
আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি এবং ত্যাগের পরীক্ষা দিতে পারি ।
কোরবানি করার ফলে আমরা আমাদের নেকির পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে পারি ।
এর ফলে আখিরাতে আমরা অনেকে লাভবান হব । কোরবানি করার ফলে আমরা ইহকাল এবং পরকাল
উভয়কালেই ই আল্লাহর নৈকট অর্জন করব এবং আমাদের মধ্যে সুখ শান্তি বিরাজ করবে ।
Read More :ঈদের নতুন মেহেদি ডিজাইন ২০২৩
কোরবানির ইতিহাসঃ
কোরবানির ইতিহাস ইসলামের প্রাচীন সময় থেকে প্রচলিত হয়ে আসছে । কোরবানির ইতিহাস সম্পর্কে কোরআনে আলোচনা করা হয়েছে ।
আল্লাহতালা ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার পুত্র ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোরবানি করার নির্দেশ দেন ।
ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহতালা সন্তুষ্টির জন্য প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় ।
এবং নিজেকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুতি নেই ।
ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোরবানি করার প্রস্তুতি নেন তখনই
আল্লাহতালার নির্দেশে ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবর্তে একটি দুম্বা কুরবানী হয়ে যায় ।
তখন থেকেই এই কোরবানি প্রথা প্রচলিত হয়েছে ।
এবং তারপর থেকে প্রতি বছর কোরবানি ঈদে এলে সমাজের সামর্থ্যবানরা চেষ্টা করে কোরবানি
দেওয়ার জন্য কারণ যাদের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে আল্লাহ তাদের উপর কোরবানিকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন ।
আমাদের যাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে আমাদের অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করার ।
কোরবানির দোয়াঃ
‘ইন্নি ওয়াজ জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন।
ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাবিবল আলামিন।
লা শারিকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন।
আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা।’ আবু দাউদ: ২৭৯৫)
অথবা কোরবানি করার সময় এই দোয়া পাঠ করবে—بسم الله والله أكبر اللهم هذا منك ولك هذا عني اللهم تقبل من فلان وآل فلان ‘বিসমিল্লাহ, ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহুম্মা হাজা মিনকা ওয়া লাকা, হাযা আন্নি। আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন… ওয়া আলি …
ডট দেয়া স্থানদ্বয়ে কোরবানীকারীর নাম উল্লেখ করবে। তবে, এসব দোয়ার মধ্যে কোরবানির সময় শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ বলা ওয়াজিব।
বিসমিল্লাহি আল্লাহুআকবর বলা উত্তম।
এর অতিরিক্ত যে কথাগুলো আছে সেগুলো বলা মোস্তাহাব; ওয়াজিব বা জরুরি কিছু নয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্নতের অনুসরণে সঠিক নিয়মে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
দোয়াটি পাঠ করার পর বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে পশু জবাই করা শুরু করতে হবে ।
এবং পশু জবাই করা শেষ হলে তখন যে দোয়াটি পাঠ করতে হবে তা হলোঃ
‘আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মদ ও খালিলিকা ইবরাহিম।’
যদি ভাগে কুরবানী করা হয় তাহলে মিন্নি’র স্থলে ‘মিন্না’ পাঠ করবে এবং সকল ভাগিদের নাম পাঠ করবে।
এছাড়াও কোরবানির সময় বিসমিল্লাহ বলা ওয়াজিব । এবং বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলা অতি উত্তম ।
এবং এর অতিরিক্ত যে কথাগুলো আছে সেগুলো বলা হচ্ছে মুস্তাহাব ।
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম দেরকে সঠিক নিয়ম অনুসারে সুন্নত মেনে কুরবানী করার নির্দেশ দিয়েছেন ।
কোরবানি করার নিয়মঃ
যিনি কোরবানি করবেন তাকে অবশ্যই নিজের হাতে কোরবানি করতে হবে এটা হচ্ছে মুস্তাহাব ।
কিন্তু যদি নিজের হাতে জবাই না করতে পারে তাহলে অন্যের দ্বারা জবাই করাবে ।
এ অবস্থায় কোরবানি দতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকাটা উত্তম ।
জবাই করার আগে অবশ্যই চুরি ভালোভাবে ধার দিয়ে নেওয়াটা হচ্ছে মুস্তাহাব ।
কোরবানির পশুকে এমন ভাবে জবাই করতে হবে যেন পশুর কোন প্রকার অপ্রয়োজনীয় কষ্ট না লাগে ।
এবং কোরবানির গরু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে জবাই করা উচিত ।
যদি জবাই কারের সঙ্গে কেউ ছুরি চালাতে সাহায্য করে তাহলে তাড়ও বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলতে হবে , এটা ওয়াজিব ।
এবং জবাই করার সময় অবশ্যই খেয়াল করতে হবে কোরবানির গরুকে কেবলামুখী করে শোয়াতে হবে ।
তারপর বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে জবাই করা শুরু করতে হবে ।
ইছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ না বলে জবাই করলে কোরবানির পশু টি হারাম বলে গণ্য হবে ।
কিন্তু যদি ভুলক্রমে বিসমিল্লাহ না বলে জবাই করে তাহলে কোরবানির গোস্ত খাওয়া জায়েজ আছে ।
পশু কোরবানি করার সময় মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা জরুরি নয় মনে মনে নিয়ত করতে হবে যে আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করেছি ।
তবে মুখে দোয়া করা উত্তম ।
জবাই করার সময় অবশ্যই চারটি রগ কাটা জরুরী সেগুলো হচ্ছেঃ
১. কণ্ঠনালি, ২. খাদ্যনালি, ৩. দুই পাশের মোটা রগ, যাকে ওয়াজদান বলা হয়।
এই চারটি রোগের মধ্যে যে কোন তিনটি যদি রক্ষাটা হয় তাহলে কোরবানি সঠিক এবং শুদ্ধ হবে ।
কিন্তু যদি দুইটি রগ কাটা হয় তাহলে কোরবানির শুদ্ধ হবে না ।
পরিশেষেঃ
কোরবানি করতে হবে আমাদের আল্লাহ তাআলার সঠিক নিয়ম অনুযায়ী । এবং কোরবানি করার জন্য অবশ্যই নির্দিষ্ট দোয়া রয়েছে সেই দোয়া এবং নিয়ম আজকে আপনাদের মাঝে তুলে ধরলাম । আপনারা কোরবানি করার সময় অবশ্য এগুলা খেয়াল করবেন এবং দোয়া গুলো এখান থেকে পড়ে শিখে নিন । আসসালামুয়ালাইকুম