চেক ফেরতের পদ্ধতি (চেক রিটার্ন প্রক্রিয়া) ব্যাংকিং ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যখন কোনো চেক বিভিন্ন কারণে ব্যাংক কর্তৃক গ্রহণযোগ্য হয় না, তখন সেই চেককে ফেরত বা রিটার্ন করা হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক লেনদেনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চেক ফেরতের পদ্ধতি সম্পর্কে জানলে, ব্যবহারকারী সহজেই বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারেন এবং ভবিষ্যতে চেক ফেরত এড়াতে সচেতন হতে পারেন।
চেক ফেরতের পদ্ধতি: চেক কেন ফেরত হয়?
চেক ফেরতের পদ্ধতি শুরু হয় তখনই যখন চেকটি ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়। চেক ফেরত হওয়ার কারণগুলো সাধারণত নিচে উল্লেখ করা হলো:
- অপর্যাপ্ত ব্যালেন্স: চেক ইস্যুকারীর অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে চেক ফেরত হতে পারে।
- চেকের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া: চেক ইস্যুর ৩ মাস পর চেকটি অবৈধ হয়ে যায় এবং এটি ফেরত হয়ে যায়।
- স্বাক্ষর না মেলানো: চেক ইস্যুকারীর স্বাক্ষর ব্যাংকের রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না।
- অর্থের অঙ্কের মিল না থাকা: সংখ্যায় ও কথায় লেখা অর্থের অঙ্কের মিল না হলে চেক ফেরত হতে পারে।
- চেকের উপর অসম্পূর্ণ তথ্য: তারিখ, পে টু নাম্বার ইত্যাদি তথ্য সঠিকভাবে পূরণ না করলে চেক ফেরত হতে পারে।
চেক ফেরতের পদ্ধতি: ধাপগুলি
চেক ফেরতের পদ্ধতি বিভিন্ন ধাপে সম্পন্ন হয়, যা নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
- চেকের জমা দেওয়া: প্রথম ধাপে, প্রাপক বা পে’ই চেকটি তার নিজস্ব ব্যাংকে জমা দেয়। ব্যাংক প্রাথমিক পর্যায়ে চেকটি যাচাই করে দেখে যে এটি সঠিকভাবে পূরণ করা হয়েছে কি না।
- চেক ক্লিয়ারিং প্রক্রিয়া: চেকটি জমা হওয়ার পর, ব্যাংক চেকের ক্লিয়ারিং প্রক্রিয়া শুরু করে। এতে চেকটি ইস্যুকারীর ব্যাংকে পাঠানো হয় যাচাইয়ের জন্য।
- চেক ফেরত: যদি ইস্যুকারীর অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকে বা অন্য কোনো কারণের জন্য চেকটি গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে চেকটি রিটার্ন মেমো সহ প্রাপক ব্যাংকে ফেরত পাঠানো হয়। রিটার্ন মেমোতে ফেরতের কারণ উল্লেখ থাকে।
- ব্যাংক থেকে গ্রাহককে নোটিফিকেশন: চেক ফেরত হওয়ার পর, প্রাপক ব্যাংক গ্রাহককে একটি নোটিফিকেশন পাঠায় যা জানায় যে তার চেকটি ফেরত হয়েছে এবং ফেরতের কারণ কী।
- ফি এবং জরিমানা: চেক ফেরতের ফলে ইস্যুকারী এবং প্রাপক উভয়েরই কিছু ফি বা জরিমানা দিতে হতে পারে। এটি ব্যাংকের নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে প্রযোজ্য হয়।
- আইনি পদক্ষেপ: যদি চেকটি বড় কোনো লেনদেনের জন্য ইস্যু করা হয়ে থাকে এবং তা ফেরত হয়, তবে প্রাপক আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে, আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নোটিশ পাঠানো হয় এবং প্রয়োজনবোধে আদালতে মামলা করা হতে পারে।
চেক ফেরতের পদ্ধতি: কি করণীয়?
চেক ফেরত এড়ানোর জন্য কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ রাখা: সবসময় চেষ্টা করুন যে আপনার চেকের সমপরিমাণ অর্থ অ্যাকাউন্টে থাকে।
চেকের সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করা: তারিখ, পে টু নাম্বার এবং অঙ্কের মিল রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
স্বাক্ষর যাচাই: ব্যাংকের রেকর্ড অনুযায়ী সঠিকভাবে স্বাক্ষর করতে হবে।
মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বে চেক ইস্যু করুন: ৩ মাসের মধ্যে চেক জমা দেওয়া উচিত।
চেক ফেরতের পদ্ধতি: প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
1.চেক ফেরত হলে কি করণীয়?
চেক ফেরত হলে প্রথমে ব্যাংকের থেকে পাওয়া রিটার্ন মেমো দেখে ফেরতের কারণ নির্ধারণ করুন। সমস্যার সমাধান করে চেকটি পুনরায় ইস্যু করতে হবে।
2. চেক ফেরতের পদ্ধতি কত দিন সময় নেয়?
সাধারণত, চেক ফেরত প্রক্রিয়া ২ থেকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন হয়।
3. চেক ফেরত হলে কি জরিমানা দিতে হয়?
হ্যাঁ, ইস্যুকারী ও প্রাপক উভয়েরই কিছু জরিমানা বা ফি দিতে হতে পারে।
4. চেক ফেরতের কারণে কি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?
হ্যাঁ, বড় লেনদেনের ক্ষেত্রে চেক ফেরত হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
5. কোন কারণগুলি চেক ফেরত হওয়ার জন্য সবচেয়ে সাধারণ?
সাধারণত, অপর্যাপ্ত ব্যালেন্স, স্বাক্ষর না মেলানো এবং অসম্পূর্ণ তথ্য চেক ফেরতের প্রধান কারণ।
উপসংহার
চেক ফেরতের পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা ব্যাঙ্কিং লেনদেনের নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খলতা নিশ্চিত করে। চেক ফেরত হওয়ার ক্ষেত্রে, প্রাপকের উচিত দ্রুত সমস্যার সমাধান করে পুনরায় চেক জমা দেওয়া। ভবিষ্যতে এই ধরনের সমস্যায় না পড়তে সচেতনভাবে চেক ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত। চেক ফেরতের পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখলে, এই ধরনের সমস্যা সহজেই এড়ানো যায় এবং আর্থিক লেনদেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।